উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফের শিরোনামে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার। যোগী সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতি মেনে রাজ্যজুড়ে একের পর এক এনকাউন্টার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। মাত্র দু’দিনে ২০-র বেশি এনকাউন্টার হয়েছে, আহত বা গ্রেফতার হয়েছে ডজনখানেক অপরাধী। রাজ্য পুলিশ এই অভিযানের নাম দিয়েছে “অপারেশন লাঙ্গড়া” ও “অপারেশন খাল্লাস”।
বরেলি থেকে শুরু, রাজ্যজুড়ে বিস্তার
গত সেপ্টেম্বরে বরেলিতে একটি ধর্মীয় প্রকাশনা কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ানোর পরই পুলিশ নতুন করে অভিযান শুরু করে। প্রথমে বরেলিতে, তারপর ধীরে ধীরে বুলন্দশহর, কানপুর, লখনউ, গোরখপুরের মতো জেলায়ও তল্লাশি ও এনকাউন্টার তীব্র হয়।
পুলিশের দাবি, তারা আগে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তাই সমন্বিতভাবে একসঙ্গে একাধিক জেলায় অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছে। এই অভিযানে প্রধানত দুষ্কৃতী ও অপরাধচক্রের সদস্যদের নিশানা করা হচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান: এনকাউন্টারের ফল
পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৭ সালে যোগী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫২ জন অপরাধী এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে, আর আহত হয়েছে ১০,২৫৪ জন।
একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই—অপরাধীদের ভয় দেখিয়ে তোলা নয়, পুরোপুরি দমন করা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি ফিরিয়ে আনা।” যোগী আদিত্যনাথ নিজেও বারবার বলেছেন, “আইন হাতে নিলে এনকাউন্টার হবেই”— এই বার্তা কার্যত সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
সমর্থন ও সমালোচনার দ্বৈরথ
এই অভিযান ঘিরে রাজ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সমর্থন: শাসকদল বিজেপির দাবি, অপরাধের হার এই অভিযানের ফলে অনেকটাই কমেছে। ২০২৩ সালের এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে, হত্যার হার ৪২ শতাংশ কমেছে। বরেলির এক ব্যবসায়ী বলেন, এলাকায় গুণ্ডাগিরি কমার ফলে মানুষ খুশি।
সমালোচনা: বিরোধীরা অবশ্য এই অভিযানের সমালোচনা করে বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই নিরপরাধ মানুষ ফাঁদে পড়ছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নিশানা করা হচ্ছে।
তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে কেউ গুণ্ডাগিরি কমার ফলে শান্তি আশা করছেন, আবার কেউ নিরীহ কেউ আহত হতে পারেন ভেবে আতঙ্কে ভুগছেন। ‘অপারেশন লাঙ্গড়া’ ও ‘খাল্লাস’ উত্তরপ্রদেশের অপরাধচক্র ভাঙতে কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।