মালদহে ‘১৬ মাইল’-এর ছায়া, কাকিমার পর স্বামী আটক, তদন্তে নয়া মোড়

মালদহের রতুয়া ২ নম্বর ব্লকের কোকলামারি গ্রামের ঠিকাদার সাদ্দাম নাদাপ খুনের ঘটনায় তাঁর দূর সম্পর্কের কাকিমার গ্রেফতারির পর এবার আটক করা হয়েছে তাঁর স্বামী রহমান নাদাপকে। এই ঘটনা জেলার পুরাতন ১৬ মাইলের কুখ্যাত চার খুনের ঘটনার সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। পুরাতন ১৬ মাইলে ১৯ বছর বয়সী আসিফ পরিবারেরই চার সদস্যকে খুন করে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মীয়মাণ গুদামঘরের মেঝের নিচে পুঁতে দিয়েছিল, যার জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। সাদ্দাম খুনের ঘটনাতেও একই রকম নৃশংসতা এবং দেহ লোপাটের পদ্ধতি দেখা যাচ্ছে।

সিহুর গ্রামের হত্যাকাণ্ড: পুরাতন ১৬ মাইলের প্রতিচ্ছবি?
২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির পর ২০২৫ সালের ১৮ মে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার সিহুর গ্রামের ঘটনাতেও যেন পুরাতন ১৬ মাইলের ছায়া। এই গ্রামে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির দেওয়াল ভেঙে উদ্ধার করা হয়েছে সাদ্দাম নাদাপের দেহ। সাদ্দামকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরই দূর সম্পর্কের কাকিমা। এমনকি মৃতদেহটিও তিনি নাকি নিজে লোপাট করার চেষ্টা করেছেন। ইংরেজবাজার থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। তবে তদন্তকারীরা প্রায় নিশ্চিত, ধৃত মহিলা একা এই কাজ কিছুতেই করতে পারেন না। তাঁর সঙ্গে আরও কেউ বা কারা যুক্ত রয়েছে।

মর্মান্তিক খুনের বিবরণ ও দেহ লোপাটের চেষ্টা
সিহুর গ্রামে ধৃত মহিলার বাবার বাড়ি। সম্প্রতি তাঁর ভাইরা নতুন পাকা বাড়ি তৈরিতে হাত দিয়েছেন, যা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। দফায় দফায় জেরার পরও ওই মহিলা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তিনি একাই খুনের পরিকল্পনা করেছেন এবং পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ১৭ মে বাবার বাড়ি চলে যান। পরদিন ফোন করে সাদ্দামকে সেখানে যেতে বলেন। সাদ্দাম নিজের স্কুটার চালিয়ে রাত প্রায় পৌনে ১২টা নাগাদ তাঁর বাবার বাড়িতে হাজির হন। ওই রাতেই তিনি সাদ্দামকে ধারালো অস্ত্রের কোপ দিয়ে খুন করেন। এরপর তাঁর দেহ প্লাস্টিকে মুড়িয়ে টেনে নিয়ে যান নির্মীয়মাণ বাড়ির বাথরুমে।

মহিলা জানান, ভাইদের নতুন বাড়ির কাজ বন্ধ থাকায় সেখানে কেউ যাবে না বলে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু মৃতদেহ থেকে যাতে কোনো দুর্গন্ধ না ছড়ায়, তার জন্য তিনি সরষে, শুকনো লঙ্কা আর রসুন পুড়িয়ে দেন। পরদিন বালি ও সিমেন্ট জোগাড় করেন। এরপর সাদ্দামের দেহ বাথরুমের দেওয়ালে থাকা ফাঁকা জায়গায় রেখে দেন। যখনই ফাঁকা সময় পেতেন, সিমেন্ট-বালি মেখে দেওয়ালের ওই ফাঁকা জায়গায় ইট গেঁথে দিতেন। দু’দিনের মধ্যে তিনি সেই কাজ সেরে ফেলেন। ২০ তারিখই তাঁকে নিতে শ্বশুরবাড়ি চলে যান তাঁর স্বামী, এবং তিনি স্বামীর সঙ্গে মালদার বাড়িতে চলে আসেন বলে জানিয়েছেন ধৃত মহিলা।

স্বামীর আটক: তদন্তে নতুন মোড়
তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানতে পারেন, ধৃত মহিলার স্বামী রহমান নাদাপ শিক্ষকতার পেশায় ঢোকার আগে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। যদিও শিক্ষকতা শুরু করার পর তিনি সেই কাজ ছেড়ে দেন। সিহুর গ্রামের দেওয়ালে যেভাবে ইট গেঁথে সাদ্দামের দেহ লুকোনো হয়েছিল, তা যে কাঁচা হাতের কাজ নয়, তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। ধৃত মহিলাও দাবি করেন, তিনি বাগানের খুরপি দিয়ে দেওয়াল গেঁথেছিলেন। তাঁর দাবি কিছুটা হলেও তদন্তকারীদের দ্বিধায় ফেলেছিল। কিন্তু রহমানের রাজমিস্ত্রির কাজে যুক্ত থাকার অতীত তথ্য গোটা বিষয়টি আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। জেরার জন্য মঙ্গলবার রাতে রহমান নাদাপকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি এখনও ইংরেজবাজার থানায় রয়েছেন।

এদিকে, বুধবার মালদা মেডিক্যালে সাদ্দামের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে এবং দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, “এই ঘটনায় তদন্ত জারি রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে তদন্তেও গতি আসবে।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy