মহিলাদের শরীরে আয়রনের চাহিদা এতো বেশি কেন? জেনেনিন এর কারণ ও প্রতিকার

পর্যাপ্ত ঘুম বা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পরেও বহু মহিলা প্রায়শই ক্লান্তি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তনের মতো সমস্যায় ভোগেন। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় এই উপসর্গগুলিকে অনেকে হয়তো ‘সাধারণ দুর্বলতা’ বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই লক্ষণগুলি প্রায়শই শরীরে আয়রনের মারাত্মক ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়, যা মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।

আয়রন মানবদেহের জন্য এক অত্যাবশ্যকীয় খনিজ। এটি রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে, শক্তি উৎপাদনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেকটাই বেশি। এর পেছনে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক প্রক্রিয়া।

কেন মহিলাদের আয়রনের চাহিদা বেশি?

১. মাসিকচক্রজনিত রক্তক্ষরণ: প্রতি মাসে মাসিকচক্রের সময় মহিলাদের শরীর থেকে স্বাভাবিকভাবেই রক্তক্ষরণ হয়। এই প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয়রন শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এই কারণেই ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রতিদিন প্রায় ১৮ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন হয়, যেখানে পুরুষদের দৈনিক চাহিদা মাত্র ৮ মিলিগ্রাম। এই নিয়মিত রক্তপাতই মহিলাদের আয়রনের ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ।

২. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। একইসঙ্গে, গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অতিরিক্ত আয়রন অপরিহার্য। এই সময়ে আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে, এমনকি অকাল প্রসবের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই হবু মায়েদের জন্য আয়রনের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

৩. স্তন্যদানের সময়: সন্তান প্রসবের পর স্তন্যপান করানোর সময়ও মায়ের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ক্ষয় হয়। দুধ উৎপাদনের জন্য এবং প্রসব-পরবর্তী শারীরিক পুনরুদ্ধারের জন্য এই সময়ে মায়ের শরীরে আয়রনের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। আয়রনের অভাব এই সময় মায়ের মধ্যে তীব্র ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে।

আয়রনের ঘাটতি পূরণে কী করবেন?

আয়রনের ঘাটতি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও কিছু নিয়ম মেনে চললে এর সমাধান সম্ভব:

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: খাদ্যতালিকায় নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন:

সবুজ শাক-সবজি: পালং শাক, ব্রকোলি, কেল।

ডাল ও শস্য: ছোলা, মসুর ডাল, কিসমিস।

ফল ও বাদাম: বীট, ডার্ক চকোলেট।

প্রাণীজ উৎস: লাল মাংস, ডিমের কুসুম (বিশেষত ডিমের কুসুম)।

ভিটামিন সি-এর গুরুত্ব: আয়রন শোষণে ভিটামিন সি অত্যন্ত সহায়ক। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি যুক্ত ফল বা সবজি গ্রহণের চেষ্টা করুন। যেমন: কমলা, আমলকি, লেবু, পেয়ারা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।

চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট: যদি খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ করা সম্ভব না হয় বা ঘাটতি গুরুতর হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত আয়রনও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

মহিলাদের সুস্থ ও কর্মঠ জীবনযাপনের জন্য আয়রনের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্লান্তি বা দুর্বলতাকে অবহেলা না করে, সঠিক সময়ে এর কারণ নির্ণয় এবং প্রতিকারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy