উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার দার্জিলিং পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, কেন্দ্র সরকার দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে “নির্বাচন কমিশনকে ঘুষ দিচ্ছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিস্ফোরক মন্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ির বন্যা পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন।
“ক্ষমতার মোহে অন্ধ কেন্দ্র”
বন্যা পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, কেন্দ্র সরকার নির্বাচন এবং ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে বাংলাকে বঞ্চনা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলার মানুষের দুর্দশার প্রতি কেন্দ্রের মোটেই মনোযোগ নেই।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মানুষ বন্যার জলে ভাসছে, বাড়িঘর হারিয়েছে, ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে আমরা কোনও সাহায্য পাচ্ছি না। এটা বাংলার প্রতি স্পষ্ট বৈষম্য।” তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনও ত্রাণ বা আর্থিক সাহায্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়নি, বরং তারা শুধু নির্বাচন কমিশনকে ঘুষ দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
ডিভিসি-র জল ছাড়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ
ডিভিসি থেকে বারবার জল ছাড়ার ঘটনা নিয়েও কেন্দ্রকে একহাত নিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ঝাড়খণ্ডকে বাঁচানোর জন্য কেন্দ্র ডিভিসি থেকে জল ছাড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি চাই ঝাড়খণ্ড বাঁচুক, কিন্তু বাংলাকে ডুবিয়ে নয়।”
দীৰ্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবি
গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছেন এবং কৃষি জমি ধ্বংস হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বন্যা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, “তিস্তা নদীর গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের উচিত ছিল বাঁধ নির্মাণ বা নদী ব্যবস্থাপনার কাজে সহযোগিতা করা। কিন্তু তারা বাংলাকে উপেক্ষা করছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিংয়ে ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জেলা প্রশাসনকে দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য তৎপর হতে বলেছেন।