তৃণমূল কর্মীর বাড়ি থেকে উদ্ধার সেনার অস্ত্র, প্রশ্নের মুখে শাসকদল

পানিহাটিতে তৃণমূল কর্মী নঈম আনসারি ওরফে ‘নেপালি’-র বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় সেনা ব্যবহৃত অত্যাধুনিক কার্তুজ, যা অস্ত্র কারবারের এক ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরেছে। অভিযোগ, নঈম আনসারি বাম আমল থেকেই অপরাধ জগতের ‘কিং পিন’ ছিল এবং তৃণমূল আমলে শাসক নেতাদের ছত্রছায়ায় তার ‘নেপালি’ অপরাধের জাল বিস্তার করতে শুরু করে।

বাম আমল থেকে তৃণমূলের ছায়ায় ‘নেপালি’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় ৫৫ বছর বয়সী নঈম আনসারির বাড়ি পানিহাটির নয়াবস্তির মৌলানা সেলিম রোডে। বিশেষ চেহারার কারণে সে ‘নেপালি’ নামে পরিচিত। বাম আমলে মূলত খড়দা, টিটাগড়, সোদপুর ও পানিহাটিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। মারধর, থানায় ঢুকে গন্ডগোল-সহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর, নঈম রাতারাতি ‘জার্সি বদলে’ শাসকদলে নাম লেখায় এবং ধীরে ধীরে একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হয়ে ওঠে। অভিযোগ, এলাকার শাসক নেতাদের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে সে অস্ত্র কারবারেও হাত পাকিয়েছিল।

সেনার অস্ত্র ভাড়ায় খাটাত ‘নেপালি’?
গত সোমবার রাতে কামারহাটি ও খড়দা থানার পুলিশ নঈম আনসারির বাড়িতে হানা দেয়। সেখান থেকে উদ্ধার হয় স্টেইন গান, পাইপ গান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কার্তুজও। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দ্রবদন ঝা জানিয়েছেন, “কোথা থেকে ধৃত ব্যক্তি এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জোগাড় করেছিল? কোথায় সরবরাহ করত সে? সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের বাড়ি থেকে চারটি দেশি পাইপ গান, চার রাউন্ড ৮ এমএম কার্তুজ, পাঁচ রাউন্ড .৩৮ কার্তুজ, তিন রাউন্ড ৭.৬২ এমএম কার্তুজ, এক রাউন্ড .৩১৮ নাইট্রো কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নঈম আনসারি দুষ্কৃতীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়ায় দিত এবং অস্ত্র সরবরাহ করতে তার কয়েকজন সাগরেদও ছিল। রীতিমতো ‘টিম’ তৈরি করে এই কারবার চালাত নঈম।

রাজনৈতিক চাপানউতোর ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
নঈমকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, ঠিক কত টাকায় ও কাদের অস্ত্র ভাড়া দিত সে, এবং এই অস্ত্রের উৎস কী। তবে, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এই অস্ত্র কারবারের খবর কি আগে থেকে পুলিশের কাছে ছিল না? কেনই বা এত দেরিতে পুলিশ খবর পেল এবং কেনই বা এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?

এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ ও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ দে’র সঙ্গে নঈমের ঘনিষ্ঠতার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় (এক্স হ্যান্ডেল) পোস্ট করে সুর চড়িয়েছেন। ধৃত নঈমকে পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ দে’র ‘ডান হাত’ উল্লেখ করে রাজ্য পুলিশের রাজীব কুমারকে এ নিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু। পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন তিনি।

এ নিয়ে নির্মল ঘোষের কোনো প্রতিক্রিয়া না মিললেও, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ দে মুখ খুলেছেন। তাঁর দাবি, “কাউন্সিলর হিসেবে অনেকেই ছবি তোলেন। কে, কী রকম, কার মনে কী আছে সেটা সব সময় বোঝা যায় না। শুভেন্দু অধিকারী জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থাকেন। তাই, ওনার পক্ষে এসব বোঝা সম্ভব নয়।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy