নদিয়ার হাঁসখালি থানায় শিউলি বিশ্বাস নামে এক মহিলার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর ননদ মৌসুমী মণ্ডল। মৌসুমীর অভিযোগ, তাঁর ননদ শিউলি বিশ্বাস একই সঙ্গে দুই দেশের নাগরিক। তিনি বাংলাদেশের স্কুলে শিক্ষিকতা করেন, অথচ পশ্চিমবঙ্গে ভোটার হিসাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, রেশন-সহ সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। এমনকি নির্বাচনের সময় ওপার বাংলা থেকে এসে এদেশে ভোটও দিয়ে যান।
পরিবার নিয়ে গুরুতর অভিযোগ:
অভিযোগকারী মৌসুমী মণ্ডলের দাবি, তাঁর ননদ শিউলি ও ননদের স্বামী বিশ্বজিৎ বিশ্বাস দু’জনেই বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ, ওড়াকান্দির বাসিন্দা এবং সেখানকার ভোটার। পেশায় দু’জনই শিক্ষক এবং বাংলাদেশে স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁদের দুটি সন্তানও সেখানে পড়াশোনা করে। কিন্তু শিউলি ও তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ দু’জনেই বাংলাদেশের পাশাপাশি নদিয়ার বগুলার ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। বিশ্বজিতের এদেশের আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং রেশন কার্ডও রয়েছে।
মৌসুমীর আরও অভিযোগ, তাঁর ননদের দুই সন্তান বাংলাদেশে থাকলেও, তারা পশ্চিমবঙ্গের গাড়াপোতার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি রয়েছে এবং সশরীরে উপস্থিত না থেকেও প্রতি বছর বিনা ঝঞ্ঝাটে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উঠে যাচ্ছে।
পুরো পরিবারই সন্দেহের নিশানায়:
মৌসুমী মণ্ডলের স্বামী বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে (ননদের স্বামীর নামও বিশ্বজিৎ বিশ্বাস) এক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। মৌসুমী স্বামীর অসুস্থতার সূত্র ধরে পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর শ্বশুর সুনীল কুমার বিশ্বাস-সহ পুরো পরিবার বাংলাদেশের নাগরিক। শ্বশুর বাংলাদেশে শিক্ষকতা করতেন এবং এদেশে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন।
মৌসুমী মণ্ডল অভিযোগ করেন, “এসআইআর (SIR) আবহে আমার শ্বশুর সুনীল বিশ্বাস মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বগুলার বাড়িতে এসে রয়েছেন। শাশুড়ি জবারানি বিশ্বাস তাঁর পাসপোর্ট বাংলাদেশে পাঠিয়ে পুড়িয়ে দেন, তিনি এবার থেকে এখানেই থেকে যাবেন বলে এই কাণ্ড করেছেন। আমাকে ওরা ঠকিয়েছেন। আমি চাই, পুরো পরিবারের শাস্তি হোক। আমি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি।” তাঁর মা মঞ্জু মণ্ডলও অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করেছেন।
মৌসুমীর আরও অভিযোগ, তাঁর স্বামীরা দুই ভাই-ই বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরি করেন। স্বামী কলকাতা পুরনিগমের কর্মী এবং ভাসুর বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করেন।
পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই জেলাজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের ডিএসপি শিল্পী বলেন, “ইতিমধ্যেই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে।”
- বিজেপি নেতা অমিত প্রামাণিক: এই ঘটনাকে ‘জালিয়াতি’ উল্লেখ করে বলেন, “আমরা যে আশঙ্কা করছিলাম সেটাই সত্যি প্রমাণ হল। এই জন্যই তো এসআইআর-এর প্রয়োজন। জাল ভোটার কার্ড, জাল আধার কার্ড, জাল পাসপোর্ট, পাশাপাশি অন্য দেশে বাস করে টাকা দিয়ে স্কুলের শিক্ষককে কিনে একের পর ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়া অপরাধ। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের নাগরিকত্ব ও দুই দেশের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী রাজ্য সরকার।” তিনি আরও আক্ষেপ করেন যে, শাসকদলের মদতে এসব কাজ চলার কারণে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না।
- স্থানীয় তৃণমূল নেতা অনুপ দাস: তিনি বলেন, “এটা অপরাধ। একই ব্যক্তি দুই দেশে বসবাস করছে, দুই দেশের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এটা ঘোরতর অন্যায়। প্রশাসন নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।”
যদিও মৌসুমীর শাশুড়ি জবারানি বিশ্বাস সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার দুই ছেলে, কোনও মেয়ে নেই। আমার বউমা মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা এখানকার বাসিন্দা। আমার বউমা খুব বাজে…ও আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে। আমার ছেলেকে নিয়ে আলাদা হয়ে যেতে চায়।” যদিও প্রতিবেশীদের দাবি, জবারানির দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।