একসময় চিকিৎসার জন্য মানুষকে বারবার হাসপাতালে ছুটতে হতো। ডিজিটাল যুগে দূর-দূরান্তের ডাক্তাররা অনলাইনে পরামর্শ দিতে শুরু করলেন, এবং এখন মানুষ ঘরে বসে চ্যাট করেও প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন। এই অগ্রগতির পরবর্তী ধাপ হিসেবে এবার দূর থেকে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার ঘটনা সামনে এসেছে, যার ফলে চিকিৎসার জন্য আর হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণের প্রয়োজন হবে না। বিশ্বে প্রথমবারের মতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের চিকিৎসকরা যৌথভাবে একটি সফল অস্ত্রোপচার করেছেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বড় পর্যায় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
৬৪০০ কিলোমিটার দূরের অস্ত্রোপচার:
দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন আমেরিকান সার্জন আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে প্রায় ৬,৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। স্কটল্যান্ডের ডান্ডির একটি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রথমে স্থানীয় ডাক্তাররা একটি রোবট ব্যবহার করে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধা অপসারণের পদ্ধতি (থ্রম্বেক্টমি) সম্পাদন করেন। কয়েক ঘণ্টা পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত ডাঃ রিকার্ডো হ্যানেল রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে একই অস্ত্রোপচারটি করেন। ডাঃ হ্যানেল এই প্রযুক্তিকে মানব ইতিহাসে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আইরিস গ্রুনওয়াল্ড এবং একটি আমেরিকান দলের নেতৃত্বে এই ঐতিহাসিক পরীক্ষাটি পরিচালিত হয়। এই অস্ত্রোপচারে লিথুয়ানিয়ান কোম্পানি সেন্টান্ট (Corindus) দ্বারা তৈরি রোবোটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। অধ্যাপক গ্রুনওয়াল্ড বলেন, “পূর্বে এটি সম্পূর্ণ কল্পবিজ্ঞানের মতো মনে হতো, কিন্তু এখন আমরা প্রমাণ করেছি যে এই প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া দূর থেকে সম্পাদন করতে পারে।”
স্ট্রোক রোগীদের জন্য জীবনদায়ী:
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই প্রযুক্তি স্ট্রোক রোগীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী প্রমাণিত হতে পারে। স্ট্রোকের চিকিৎসায় প্রতিটি সেকেন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী রোগীরা প্রায়শই সময়মতো চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন। এই প্রযুক্তি যে কোনও অভিজ্ঞ নিউরোসার্জনকে দূর থেকে থ্রম্বেক্টমি সার্জারি বা রক্ত জমাট বাঁধা অপসারণ করতে সাহায্য করবে, যা বহু জীবন বাঁচাতে পারে।
ডঃ হ্যানেল জানান, এত দূর থেকে কাজ করা সত্ত্বেও, প্রযুক্তির ব্যবধান ছিল মাত্র ১২০ মিলিসেকেন্ড, যা মানুষের চোখের পলকের সমতুল্য। অধ্যাপক গ্রুনওয়াল্ডের মতে, এই অভিজ্ঞতার বিশেষ দিকটি ছিল— এটি একটি সাধারণ অস্ত্রোপচারের মতোই অনুভূত হয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন তিনি রোগীর পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন।
এই পরীক্ষাটি মানবদেহে একটি প্রদর্শনী হিসাবে পরিচালিত হলেও, বিজ্ঞানীরা বলছেন শীঘ্রই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি আগামী বছরগুলিতে টেলি-নিউরোইন্টারভেনশনের ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে, যার ফলে বিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে জটিল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে।