করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি জোড় দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে প্রাচীন কাল থেকেই রোগ প্রতিরোধক ও জীবাণুনাশক হিসেবে যেসব উপাদানকে চিহ্নিত করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো হলুদ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও গুণাগুণ বিচারে হলুদ জায়গা পেয়েছে। কাঁচা ও শুকনা হলুদের গুঁড়াতে আছে প্রচুর পরিমাণে কারকিউমিন যৌগ, যা আসলে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা কারকিউমিনকে ‘ম্যাজিক যৌগ’ বলেন। কারকিউমিন ছাড়াও হলুদে আছে ফোলেট যা ফলিক অ্যাসিডের মূল উপাদান, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট।
এখানেই শেষ নয়, কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন সি। সুতরাং নিয়ম করে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়া ও রান্নায় হলুদ ব্যবহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। সাধারণ জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশির পাশাপাশি কোভিডের মতো অসুখকেও প্রতিরোধ করতে পারে হলুদ। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, হলুদের মধ্যে থাকা কারকুমিন বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার।
ভারতের ‘ন্যাশানাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর আয়ুর্বেদিক ড্রাগ ডেভলপমেন্ট’-এর সাবেক অধিকর্তা, আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ সুবল কুমার মাইতির মতে, ‘খুব ভাল হয় যদি শুকন হলুদ বেটে নিয়ে রান্নায় ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া সকালে খালিপেটে এক ইঞ্চি পরিমাণে কাঁচা হলুদ সামান্য আখের গুড় দিয়ে খেয়ে এক গ্লাস গরম জল খেলে শরীরের সব দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হবে।’
তবে শুকনা হলুদের চেয়ে কাঁচা হলুদে উপকার বেশি। যেমন, কাঁচা হলুদে ভিটামিন-সি থাকে যা শুকনো হলুদে থাকে না। তবে দু’রকম হলুদেই কারকিউমিন থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি আমাদের পিত্ত নিঃসরণও বাড়িয়ে দেয়। ফলে একদিকে হজম ক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যাও কমে যায়।
ব্যথা কমাতেও হলুদ কার্যকর। অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ জয়েন্ট পেইন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কোনও বড় আঘাত সারাতে চুনের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে লাগানোর প্রচলন আছে।
সকালে খালিপেটে কাঁচা হলুদ খেলে প্যানক্রিয়াস উদ্দীপিত হয় ও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। ফলে ডায়াবিটিস কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। ডায়াবিটিসের রোগীরাও হলুদ খেলে রোগের জটিলতা কম থাকে।
হার্টের যে কোন অসুখ প্রতিরোধ করতে পারে হলুদের কারকিউমিন। হৃদপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনীতে চর্বির প্রলেপ পড়ে আর্টারি সরু হয়ে গিয়ে হার্টে অক্সিজেন কমে যায়। এতে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে হলুদ। ডাল বা তরকারিতে কিছুটা হলুদ থাকলে ধমনিতে চর্বি জমার হার অনেকটাই কমে যায়।
রোজ হলুদ দেওয়া রান্না খেলে মস্তিষ্কের কোষও উজ্জীবিত থাকে, বেশি বয়সে ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমারস ডিজিজ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও থামিয়ে দিতে পারে হলুদের কারকিউমিন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করলে প্রি-ক্যান্সারযুক্ত পলিপ ৬০ শতাংশেরও বেশি কমে যায়।
একই সঙ্গে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে যে কোন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে হলুদ। তাই করোনার এই সংকটকালে খাদ্যে হলুদকে প্রাধান্য দিন।