মানসিক চাপ মুক্ত থাকার কিছু সহজ কৌশল, জেনেনিন বিস্তারিতভাবে

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মনও ভালো থাকা চাই। শরীরের যেমন রোগ হয়, মনেরও হয়। যেহেতু শরীর ভালো রাখতে মনের ভূমিকা অনেক, তাই মানসিক চাপ থেকে যথাসম্ভব মুক্ত থাকা প্রয়োজন। মন ভালো না থাকলে কাজের গতি কমে যাবে। কারণে অকারনে অবসাদ ও হতাশা ভর করতে পারে। আপনি হয়ে উঠতে পারেন খিটখিটে মেজাজের।
মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা সম্ভব না হলে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে এবং জীবন হয়ে পড়ে বিষাদময়। কিন্তু আশার কথা হলো- দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়নকানুন মেনে চললেই মুক্তি মিলতে পারে এ সমস্যা হতে।

কিভাবে মানসিক চাপমুক্ত থাকবেন এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের পুর্নবাসন কেন্দ্র বীকন পয়েন্ট এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন মুছা মল্লিক।

• মাসের মাত্র ১৫ তারিখ। বেতনের টাকা শেষ। দুশ্চিন্তা, বাকি দিনগুলো কিভাবে চলবে?
• ব্যবসাটা ভালো যাচ্ছে না। লোকসান গুণতে হচ্ছে। সংসার চলবে তো?

উপরের উদাহরণ গুলোর ন্যায় আরও অনেক কারণে মনে যে বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হয় তাই মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের অসুখ বিসুখের ৬০ থেকে ৯০ শতাংশই মানসিক চাপের কারণে হয়ে থাকে। মানসিক চাপের কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, মনোযোগহীনতা, পেপটিক আলসার,বুক জ্বালাপোড়াসহ হতে পারে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম।

দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ আসবেই। স্ট্রেস হবেই। তবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। চাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রথমে দরকার চাপমুক্ত থাকার ইচ্ছা। চাপ উদ্রেগকারী অবস্থাকে শান্তভাবে মোকাবেলা করতে হবে৷ তাছাড়া চাপমুক্ত থাকতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলতে পারেন –

•অফিসের কাজ পরিকল্পনা মাফিক করুন এবং নিদিষ্ট সময়ের ভেতরেই কাজ শেষ করুন। প্রয়োজনে কাজকে ছোট ছোট কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। এতে চ্যালেঞ্জিং অবস্থার সৃষ্টি হবে। আপনি হয়ে উঠবেন আরও প্রাণবন্ত।
• নিজের কাজকে বোঝা না ভেবে উপভোগ করতে শিখুন।
• ভবিষ্যতে করণীয় দায়িত্বগুলো নোট করে রাখুন।
• লম্বা লম্বা দম নিন, আস্তে আস্তে ছাড়ুন। কাজে লাগতে পারে।
• শরীরে জটিল কোন সমস্যা না থাকলে শারীরিক পরিশ্রমের কিছুটা অভ্যাস করুন।
• বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতেই হবে। পছন্দের বই পড়ুন, গান শুনুন, বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্ক রাখুন।
• সময় পেলেই হাসতে চেষ্টা করুন। প্রাণ খুলে হাসুন এতে হার্ট ভালো থাকে মনের ওপরও পড়ে ইতিবাচক প্রভাব।
• প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
• নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করুন। সৃষ্টিকর্তায় গভীরভাবে বিশ্বাসী হয়ে উঠুন। অনুভব করতে থাকুন আপনার প্রতিপালক আপনাকে ত্যাগ করেননি। এতে মনে প্রশান্তি আসে।
• মেডিটেশন করতে পারেন।
• ধূমপান যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। সংযত জীবনযাপন আপনাকে সুস্থতা উপহার দেবে।
• পরিমিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
• অফিসের দায়িত্ব বন্টন করে দিন।
• কাজে নিখুঁত হোন তবে খুঁতখুঁতে নয়।
• সহকর্মীদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করুন।
• অফিসের বসের পছন্দ অপছন্দের দিকে লক্ষ্য রাখুন।
• শিশুর ইচ্ছা অনিচ্ছার মতামতকে মূল্যায়ন করুন।
• অভিভাবকরা গৃহবিবাদ এড়িয়ে চলুন।
• পড়ালেখার প্রতি চাপ পরিমিত করুন।
• স্বামী- স্ত্রী পরস্পরকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
• একসঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। শেয়ার করতে পারেন প্রিয় অনুভূতি। দক্ষ শ্রোতা হয়ে শুনুন একে অপরকে।
• ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে মূল্যায়ন করুন।
• পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার সম্পর্ক স্থাপন করুন।
• অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি দিন।
• ছোট শিশু বাচ্চাদের কাছে টানুন, ভালবাসা দিন। তাদের সাথে অনূভুতির জগতে শৈশবকে অনুভব করুন।
• প্রিয়জনের সাথে ঘুরতে পারেন অবসর পেলেই। প্লান করে রাখুন। উদ্দীপনাকে জাগ্রত রাখুন। পরিবারের সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিন ভালবাসার মন্ত্র।
• মনে করুন প্রতিটি সকালই আপনার জন্য নতুন। প্লান করুন নতুন কিছু করার।
• যতটুকু সম্ভব মানুষকে সাহায্য করুন, শুধু অর্থ দিয়ে নয়- দিকনির্দেশনা, সঠিক পরামর্শ, সুন্দর আচরণসহ সব ইতিবাচক চিন্তাভাবনা দিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিন। মহান ব্যক্তিরা এভাবেই জীবনকে উপভোগ করতেন।
• ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনুন। দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান,জীবন বদলে যাবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy