শরীরের যেসব অংশে বেশি ঘর্ষণ ও চাপ পড়ে, সেসব স্থানে কড়া পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। কালচে বা হলদে রঙের শক্ত স্তর ত্বকের উপর তৈরি হয়, যা দেখতে যেমন খারাপ লাগে তেমনই মাঝে মাঝে ব্যথারও কারণ হতে পারে। পায়ে, হাতের আঙুল বা কনুইতে কড়া বেশি দেখা যায়।
পায়ের তলাসহ শরীরের অন্যান্য অংশেও ত্বক শক্ত হয়ে কড়া পড়তে পারে। কাঁটার আঘাত বা দীর্ঘক্ষণ ধরে চাপা জুতো পরার কারণেও এমনটা হতে পারে। পায়ের যে অংশে ক্রমাগত চাপ লাগে, সেখানকার ত্বক দীর্ঘদিন পরে শক্ত হয়ে যায়, যাকে ক্যালাস বলা হয়।
সাধারণত কড়া তেমন কোনো শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি না করলেও, এটি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে। শুরুতে গোলাকার আকারের এই কড়া আক্রান্ত স্থানটিকে শক্ত, ভারী ও কালচে বা হলদে করে তোলে। পায়ে ক্রমাগত চাপ বন্ধ হলে ধীরে ধীরে ক্যালাস সারতে শুরু করে। তবে জুতো পরিবর্তনের পরেও সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পায়ের ত্বকে কিছু ঢুকে গেলে নিজে থেকে বের করার চেষ্টা করবেন না, এতে কড়া পড়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ পায়ে রক্ত প্রবাহ কম থাকার কারণে জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে। তবে কর্ন এবং ক্যালাস ঘরোয়া উপায়েও নিরাময় এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব। জেনে নিন কিছু সহজ উপায়:
লেবুর রস: পায়ে বা হাতের যে স্থানে কড়া পড়েছে, সেখানে নিয়মিত লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। কর্নের স্থানে ব্যথা ও ফোলাভাব হলে লেবুর রস নিয়মিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে তা দূর হয়ে যায়।
রসুন ও লবঙ্গের গুঁড়ো: রসুন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এটি ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কয়েকটি রসুন বেটে তার সঙ্গে লবঙ্গের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগান। সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে কর্ন উধাও হয়ে যাবে।
ভিটামিন ই অয়েল: ত্বক ও চুলের জন্য ভিটামিন ই অয়েল খুবই উপকারী। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং শক্ত ত্বক নরম করার পাশাপাশি কড়ার চিকিৎসায়ও দারুণ কাজ করে। প্রতিদিন রাতে ভিটামিন ই অয়েল কড়ার স্থানে ব্যবহার করুন, ধীরে ধীরে স্থানটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
পেঁয়াজের পেস্ট: পেঁয়াজে রয়েছে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যাসিড, যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কর্ন বা ক্যালাসযুক্ত স্থানে পেঁয়াজের পেস্ট ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হয় এবং শক্ত স্তর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করে স্থানটি মোজা বা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখুন।
বেকিং সোডা: বেকিং সোডা প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। কর্নের স্থানে মৃত ত্বকের কোষ দূর করতে সামান্য গরম জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে ১৫ মিনিট ত্বকের কর্নের স্থানে রাখুন। এরপর পিউমিস পাথর দিয়ে এক্সফোলিয়েট করুন। বেকিং সোডায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্যাস্টর অয়েল: ক্যাস্টর অয়েল শক্ত ত্বককে নরম করতে সাহায্য করে। হলুদ বা কালচে কড়ার স্থানে নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
আনারসের খোসা: আনারসের খোসায় প্রচুর পরিমাণে ওষুধি গুণ রয়েছে। এক টুকরো আনারসের খোসা আপনার কর্নে ব্যবহার করে সারারাত ব্যান্ডেজ করে রাখুন। সকালে ব্যান্ডেজ খুলে স্থানটি ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত আরও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি:
হাত বা পায়ে কড়া পড়লে গরম জলে আক্রান্ত স্থান ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, পরে ত্বক স্ক্রাব করুন।
কড়ার স্থানে ঘন ঘন লোশন লাগানোর অভ্যাস করুন, কারণ শুষ্ক ত্বক ক্যালাস এবং কর্ন আরও শক্ত করে দেয়।
আক্রান্ত স্থান স্ক্রাব করার জন্য পিউমিস পাথর, ফাইলার বা ওয়াশকোথ ব্যবহার করুন।
আরামদায়ক জুতো পরুন, এতে কর্ন বাড়বে না এবং নিয়মিত মোজা পরার অভ্যাস করুন।
পায়ের নখ সবসময় ছোট রাখুন।
এই ছোট ছোট বিষয়গুলো এড়িয়ে চললেই কর্ন বা ক্যালাসের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।