খুশকি একবার মাথার ত্বকে বাসা বাঁধলে, তা সহজে পিছু ছাড়ে না। এর ফলে স্ক্যাল্পে চুলকানি ও চিটচিটে ভাব লেগেই থাকে। শুষ্ক ত্বক, সেবোরিহিক ডার্মাটাইটিস, কেমিকেলযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার, সংবেদনশীলতা এবং মাথার ত্বকে খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাকের বৃদ্ধি – এগুলো খুশকি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
বাজারে অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুর অভাব না থাকলেও, অনেক সময় জেদি খুশকি দূর করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় মেনে চললে চুল ও মাথার ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় এবং দ্রুত খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তেমনই তিনটি সহজ উপায় জেনে নিন:
১. নারকেল তেল: খুশকি নিয়ন্ত্রণে নারকেল তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। ৩৪ জনের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারকেল তেল একজিমার মতো চর্মরোগও সারাতে পারে। এই তেলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে। খুশকি তাড়াতে সামান্য গরম নারকেল তেল মাথার তালুতে ভালোভাবে মাসাজ করুন এবং কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
২. অ্যালোভেরা: খুশকি দূর করার আরও একটি কার্যকরী উপাদান হলো অ্যালোভেরা। প্রাকৃতিক এই উপাদানটি স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুল ভালো রাখতে খুবই উপকারী। বিভিন্ন প্রসাধনীতেও এর ব্যবহার দেখা যায়। অ্যালোভেরা পোড়া, সোরিয়াসিস, বিভিন্ন চর্মরোগ বা ঘা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় এবং এটি খুশকি চিকিৎসাতেও কার্যকর ফল দেয়। গবেষণা অনুযায়ী, অ্যালোভেরায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যা খুশকি থেকে রক্ষা করে। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরা বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং মাথার ত্বক ও চুল ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, অ্যালোভেরা প্রদাহনাশক হিসেবেও কাজ করে। মাথার তালুতে সরাসরি অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৩. বেকিং সোডা: খুশকি দূর করার আরেকটি সহজ উপায় হলো বেকিং সোডার ব্যবহার। রান্নাঘরের এই উপাদানটি খুশকির নিরাময়ে সাহায্য করে, মৃত ত্বকের কোষ দূর করে এবং চুলকানি কমাতে কাজ করে। টেস্ট-টিউব পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেকিং সোডার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য স্ক্যাল্পে খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক ধ্বংস করে। সোরিয়াসিস আক্রান্ত ৩১ জনের উপর পরিচালিত আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী, গোসলের জলে বেকিং সোডা ব্যবহারের ফলে সোরিয়াসিস আক্রান্তরা তিন সপ্তাহ পরে চুলকানি এবং জ্বালা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। খুশকি দূর করতে, ভেজানো চুলের সঙ্গে সরাসরি বেকিং সোডা ব্যবহার করুন। এরপর মাথার ত্বকে ভালোভাবে মাসাজ করুন। ১-২ মিনিট অপেক্ষা করে চুল যথারীতি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে খেয়াল রাখবেন, বেকিং সোডা ব্যবহারের পর ত্বক কিছুটা শুষ্ক লাগতে পারে, তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করা জরুরি।
এই তিনটি সহজ ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে আপনি জেদি খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং আপনার চুল ও মাথার ত্বককে সুস্থ রাখতে পারেন।