চোখ ওঠা একটি অতি পরিচিত সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে কনজাংটিভাইটিস। আমাদের চোখের সাদা অংশটুকু একটা পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে যার নাম কনজাংটিভা। কোনো কারণে এই পর্দার প্রদাহ হলে তখন এটিকে আমরা কনজাংটিভাইটিস বলে অভিহিত করি।
কারণ ও লক্ষণ: কনজাংটিভায় যখন প্রদাহ হয়, তখন এর সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো ফুলে ওঠে ও রক্তপ্রবাহ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে পুরো চোখের সাদাটুকুই তখন লালবর্ণ হয়ে যায়। পাশাপাশি চোখে চুলকানি, অস্বস্তি, চোখে ব্যথা ও খচখচে ভাব, আলোক সংবেদনশীলতা, ঘন সাদাটে বা হলদেটে নিঃসরণ এবং চোখের কোনায় ময়লা জমা ইত্যাদিও হতে পারে। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কনজাংটিভাইটিসের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস, তবে অ্যালার্জি, ঠা-া সর্দি বা চোখ কোনো রাসায়নিক বা ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে এলেও কনজাংটিভায় প্রদাহ হয় ও চোখ লাল দেখায়। অপরিষ্কার জীবন-যাপনও এর একটি কারণ। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠায় পাতলা বর্ণহীন জল পড়ে বেশি। কিন্তু ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে নিঃসরণটি ঘন ও একটু হলদেটে হয়ে থাকে।
করণীয়: চোখ ওঠা অত্যন্ত সংক্রামক। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী অন্যকে এই রোগ ছড়াতে পারেন। সে কারণে স্কুল-কলেজ, অফিস বা ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় একসঙ্গে অনেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠার তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সন্দেহ করলে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চোখ ওঠা কিছুদিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। ব্যথা-বেদনা ও অস্বস্তি কমাতে কিছু বিষয় মেনে চলা যেতে পারে
– একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো বা গজ পরিষ্কার ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে ভালো করে চিপে নিংড়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের ওপর চেপে ধরুন। দিনে বেশ কয়েকবার এটি করলে আরাম পাবেন। চোখের ধারগুলোতে যে ময়লা নিঃসরণ জমে আঠালো হয়ে থাকে, সেটাও এভাবে ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিন বারবার।
– চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক অ্যান্টিহিস্টামিন চোখের ড্রপ ব্যবহার করলে চুলকানি ও অস্বস্তি অনেকটাই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
– চোখ উঠলে চোখে কনটাক্ট লেন্স এবং যেকোনো ধরনের আই লাইনার বা সুরমা জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
– আলোক সংবেদনশীলতার কারণে কালো সানগ্লাস ব্যবহার করলে অস্বস্তিভাব কিছুটা কমে।
– বাড়িতে অন্যদের চোখ উঠলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে নিরাপদ থাকতে পারবেন, যেমন বারবার হাত পরিষ্কার করুন এবং চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। অবশ্যই নিজ নিজ ব্যবহার্য জিনিস যেমন তোয়ালে, বালিশের কভার ইত্যাদি আলাদা রাখুন। চোখে ব্যবহার করা হয় এমন প্রসাধনী কারও সঙ্গে বিনিময় না করাই উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রেও এসব সতর্কতা মেনে চলুন।
চোখ ওঠা বিরক্তিকর ও কষ্টকর সমস্যা হলেও সাধারণত এতে ভয়ের কিছু নেই। কয়েক দিন পর এটি আপনাআপনি সেরে যায়। তবে এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হলে বা সঙ্গে অন্য কোনো অসুবিধা যেমন জ্বর, প্রচণ্ড ব্যথা বা দেখতে সমস্যা কিংবা চোখে ঘোলা দেখলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। bs