ব্রেস্ট ক্যানসারের মারণ আক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় জেনেনিন

ভারতে ব্রেস্ট ক্যানসারের হার ক্রমশ বাড়ছে। আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতালের মেডিক্যাল অঙ্কোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. গৌরী শঙ্কর ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এই বৃদ্ধির হারটা কমবয়সিদের মধ্যে লক্ষ্যণীয়ভাবে বেশি। এ দেশের মোট ব্রেস্ট ক্যানসারের রোগীদের মধ্যে 44 শতাংশের বয়স 50-এর কম, 16 শতাংশের ক্ষেত্রে 40-এর কম বয়সেই রোগ ধরা পড়ে।’’ এমনকী, তিরিশের কোঠাতেও স্তন ক্যানসারের রোগীর দেখা মিলছে আজকাল।

কাদের মধ্যে দেখা যায়?
পশ্চিমে সাধারণত 45-50 বছর বয়সের মহিলাদের মধ্যেই ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি। আগেই বলা হয়েছে, এদেশে বিশ, তিরিশ এমনকী চল্লিশের কোঠাতেও প্রচুর মহিলা স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ‘‘এর কারণগুলো বেশ জটিল, তবে প্রথমেই বলতে হবে যে, আমাদের জনসংখ্যার প্যাটার্নটা বিদেশের তুলনায় আলাদা। এদেশে মাঝবয়সিদের সংখ্যা বিদেশের তুলনায় অনেক বেশি’’, বলছেন ব্রেস্ট সার্জন ও সার্জিকাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার। কিছু কিছু সমীক্ষা বলছে, গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি সংখ্যক মহিলা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গে আরও একটা ব্যাপারে সচেতন করে দিচ্ছেন ডা. সরকার, ‘‘সাধারণত কম বয়সে যাঁরা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই রোগের ধরনটা অ্যাগ্রেসিভ হয়। ব্রেস্ট ক্যানসার লুমিনাল বা বেসাল— এই দু’টি সাব টাইপের হয়। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে বেসাল সাব টাইপে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।’’

কোনওভাবে ঠেকানো যায়?
মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ডা. তাপ্তী সেন বলছেন, ‘‘সেই অর্থে এমন কোনও পদ্ধতি নেই যা অনুসরণ করে ব্রেস্ট ক্যানসার ঠেকানো সম্ভব, কারণ এর সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান খুঁজে বের করতে পারেনি।’’
ডা. ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সন্তানকে অন্তত বছর দেড়েক স্তন্যপান করানো জরুরি। এছাড়াও ওরাল কনট্রাসেপটিভের ব্যবহারে রাশ টানা, হরমোনের চিকিৎসা এড়িয়ে চলা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, শরীরে ফ্যাট জমতে না দেওয়া এবং কর্মক্ষম থাকার মতো কয়েকটি বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় সব মহিলাকেই। এতে যে স্তনের ক্যানসারের আশঙ্কা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাবে, তা নয়। তবে কমানো সম্ভব অন্তত 35 শতাংশ।’’
ডা. সরকার অবশ্য বলছেন, ‘‘বেসাল সাব টাইপ হরমোন ইন্ডিপেনডেন্ট ক্যানসার। তাড়াতাড়ি সন্তানের মা হলে বা স্তন্যপান করালেই কিন্তু এই ধরনের ক্যানসার ঠেকানো সম্ভব নয়। এর মর্টালিটি রেট খুব বেশি, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করলেই একমাত্র রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।’’

সচেতনতা তৈরিই সবচেয়ে জরুরি
সমস্ত ডাক্তার একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে ব্রেস্ট ক্যানসার রোধে সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে সচেতনতা। অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত ক্লিনিকাল ব্রেস্ট এগজ়ামিনেশন শুরু করা উচিত। ডা. সরকার বলছেন, ‘‘যেহেতু এ দেশে পশ্চিমের চেয়ে অন্তত 10-15 বছর আগে ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রমণ শানায়, তাই ম্যামোগ্রাফিতে খুব ভালো ফল পাওয়ার কথা নয়। অল্প বয়সে মহিলাদের স্তনের টিস্যুগুলির ঘনসংবদ্ধ হয়, ম্যামোগ্র্যাফিতে তাই ক্যানসার না-ও ধরা পড়তে পারে। উলটে আবার ঘন ঘন ম্যামোগ্রাফি করিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়াটাও বিচিত্র নয়। তাই ক্যানসার ঠেকানোর কাজে সবচেয়ে সহায়ক হতে পারে সচেতনতা।’’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্টেজ ওয়ান বা স্টেজ টুতে ক্যানসার ধরা পড়লে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

কী দেখলে সচেতন হবেন?
একেবারে প্রথম দিকে কিন্তু তেমন কোনও সুস্পষ্ট লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। কিন্তু স্তনে হাত দিয়ে কোনওরকম ফোলাভাব, ত্বকের টেক্সচারে পরিবর্তন, স্তনবৃন্তে ব্যথা বা ভিতর দিকে ঢুকে যাওয়া, বগলের নিচে ফোলাভাব, স্তনবৃন্ত থেকে কোনওরকম ক্ষরণ, যন্ত্রণা ইত্যাদির কোনওটি দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন, তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার আগেই ধরে নেবেন না যে আপনার ক্যানসার হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy